ক্যাটাগরিসমূহ
বই রিভিউ বিষয় ভিত্তিক আলোচনা

বৈধ ব্যবসা না-কি আসমানী আযাব!

আযানের সাথে সাথেই আজ ছেলেকে নিয়ে এশার সালাতে উপস্থিত হয়ে প্রথম কাতারের এক পার্শ্বে অবস্থান করেছিলাম। সালাত শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পূর্বে মাওলানা আব্দুল খালেক এর “আসমানী আযাব কেন”? বইটি দেখে কৌতুহল জাগলো। ছোট্ট চটি আকারের এই বইটি বাংলাদেশে ইসলামিক সেন্টার থেকে মূদ্রিত হয়েছে । পুরানো ছেড়াফাটা বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনার প্রতি আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হওয়ায় সাথে সাথে মোবাইলে  ছবি তুলে নিলাম, সালাত শেষে নিরিবিলি এই বিষয় নিয়ে ভাবার জন্য এবং দু-একটি তাফসীর দেখে পুরো আলোচনা অনুধাবন করার জন্য যা নিম্মে পাঠকদের সাথে শেয়ার করছি।

হযরত শুয়াইব আ. এর জাতির অধিকাংশই ছিল ব্যবসায়ী । তারা ক্রয় করার সময় অপর পক্ষকে ঠকিয়ে ওজনে বেশী মাল নেয়া এবং বিক্রীর সময় খরিদ্দারকে ওজনে কম দেয়ায় পারদর্শী ছিল। তাঁর জাতির লোকেরা সাধারণত মাপে কম দিতো এবং মানুষকে ঠকাতো। অর্থাৎ লেনদেনের সময় মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে কম দেয়া এদের নেশা ও পেশায় পরিণত হয়েছিলো। 

এ এমন এক জঘন্য খাসালাত ও রোগ ছিল , যা অন্তরের পরিচ্ছন্নতা এবং বাস্তব লেনদেন উভয়টাকেই দলিত মথিত করে দেয়, যেমন করে নষ্ট করে মানুষের প্রতি সৌজন্যবোধ এবং ভদ্রতা জ্ঞানকে। 

এ যালেম জাতি বাস করতো এমন সুবিধাজনক এলাকায় যে, সেখান থেকে আরব উপদ্বীপের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে গমনকারী বানিজ্য কাফেলাগুলোকে অতিক্রম করতেই হতো। অর্থাৎ সকল এলাকার বাণিজ্য যাত্রীদের এটাই ছিলো যাতায়াতের একমাত্র পথ। এ সুযোগে তাদের ওপর এ এলাকাবাসী প্রাধান্য বিস্তার করতো এবং জবরদস্তী করে তাদেরকে বাধ্য করতো ওদের শর্তেেই লেনদেন করতে। 

উপরোক্ত চিত্রটি  কী আমাদের নিকট স্পষ্ট হচ্ছে না? বর্তমানেও আমরা দেখছি যে, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে জনগনকে কষ্টে ফেলছে।

আল্লাহর নবী উপরোক্ত রোগ থেকে মু্ক্ত করতে তাদেরকে ওসব নিকৃষ্ট কাজগুলো পরিত্যাগ করার আহ্বান জানান। হযরত শুয়াইব আ. তার জাতির মধ্যে নৈতিক রোগ দূর করার লক্ষ্যে তাদের ডেকে বলছিলেন, 

“ আর হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! যথাযথ ইনসাফ সহকারে মাপো ও ওজন করো এবং লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য সামগ্রী কম দিয়ো না। আর পৃথিবীতে বিপর্যয় ছড়িয়ে বেড়িয়ো না।(হুদ- ৮৫)”

কিন্তু তাঁর গুমরাহ জাতি, তাঁকে এর জবাবে উত্তর দিয়েছিলো, 

 “হে শো’আয়েব! তোমার অনেক কথাই তো আমরা বুঝতে পারি না(*১) আর আমরা দেখছি তুমি আমাদের মধ্যে একজন দুর্বল ব্যক্তি। তোমার ভ্রাতৃগোষ্ঠী না থাকলে আমরা কবেই তোমাকে পাথর নিক্ষেপে মেরে ফেলতাম। আমাদের ওপর প্রবল হবার মতো ক্ষমতা তোমার নেই(*২)। (সূরা হুদ-৯১)”

শুয়াইব আ. এর জাতির অন্তর এতটাই পাথর হয়ে গিয়েছিল যে, তারা বুঝতেই পারতো না যে, ব্যবসা বানিজ্যে একটু হাত সাফাই না করলে ব্যবসা কী করে চলতে পারে। তারা মনে করতো ওটাও ব্যবসায়ের একটা দক্ষতা। তাই ওসব পরিত্যাগ করার অর্থ হল ব্যবসায়ে মুনাফার পরিমাণ কমে যাওয়া। এজন্য তারা আল্লাহর নবীকে বলতো যে, তাঁর কথাবার্তা উদ্ভট মনে করছে এবং এসব নীতি বাক্য উচ্চারণ ও প্রতিপালনের ফলেই হযরত শুয়াইব আ. অর্থনৈতিক দিক থেকে দরিদ্র ও দূর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর স্বগোত্রীয়দের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ছিলে বিধায় তাঁর উপর আক্রমন করতে সাহস করেনি। অন্যথায় তারা সদুপদেশ দেওয়ার প্রতিদানে আল্লাহর নবীকে পাথর মেরে হত্যা করতেও প্রস্তুত ছিল।

অথচ হযরত শো’আয়েব কোন বিদেশী ভাষায় কথা বলছিলেন না। অথবা তাঁর কথা কঠিন, সূক্ষ্ম বা জটিলও ছিল না। কথা সবই সোজা ও পরিষ্কার ছিল। সেখানকার প্রচলিত ভাষায়ই কথা বলা হতো। কিন্তু তাদের মানসিক কাঠামো এত বেশী বেঁকে গিয়েছিল যে, হযরত শো’য়েব আ. এর সোজা সরল কথাবার্তা তার মধ্যে কোন প্রকারেই প্রবেশ করতে পারতো না। 

একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, যারা অন্ধপ্রীতি, বিদ্বেষ ও গোষ্ঠী স্বার্থ দোষে দুষ্ট হয় এবং প্রবৃত্তির লালসার পূজা করার ক্ষেত্রে একগুঁয়েমির নীতি অবলম্বন করে, আবার এ সঙ্গে কোন বিশেষ চিন্তাধারার ওপর অনড় হয়ে বসে থাকে তারা তো প্রথমত এমন কোন কথা শুনতেই পারে না যা তাদের চিন্তাধারা থেকে ভিন্নতর আর যদি কখনো শুনেই নিয়ে থাকে তাহলে তারা বুঝতেই পারে না যে, এসব আবার কেমন ধারার কথা!

আবার এই বিষয়গুলো অধ্যয়ণ করার সময় একথা অবশ্যি সামনে থাকা দরকার যে, এ আয়াতগুলো যখন নাযিল হয় তখন হুবহু একই রকম অবস্থা মক্কাতেও বিরাজ করছিল। সে সময় কুরাইশরাও একইভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ত পিপাসু হয়ে উঠেছিল। তারা তাঁর জীবননাশ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু শুধু বনী হাশেম তাঁর পেছনে ছিল বলেই তাঁর গায়ে হাত দিতে ভয় পাচ্ছিল। কাজেই হযরত শো’য়েব আ.  ও তাঁর জাতির এ ঘটনাকে যথাযথভাবে কুরাইশ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় কী?

লেনদেনের সময় মানুষকে ঠকানো ও কষ্ট দেয়ার এ দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা হতে পারে একমাত্র আল্লাহর শক্তি ক্ষমতার ওপর অবিচল বিশ্বাসের ওপর। তাঁর যাবতীয় হুকুম পালনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে বাস্তব আনুগত্য, আমানতের হক আদায়ের অনুভূতি, লেনদেনের পরিচ্ছন্নতা, ব্যবসায়ী সততা ও লোকদের সাথে ভদ্রতাপূর্ণ আচরণ। ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের সাথে লেনদেন কালে একমাত্র আল্লাহভীতিই তাদের গোপন চুক্তিকে ঠেকাতে পারে। এ পরিত্র ঈমানই মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী বানানোর গ্যারান্টি দেয়, নিশ্চয়তা বিধান করে পৃথিবীর মানুষের মধ্যে সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার। 

অবশ্যই সুষ্ঠু লেনদেন ও চারিত্রিক বলিষ্ঠতার পেছনে কোন মযবুত ভিত্তি থাকতে হবে, যা নিত্য পরিবর্তনশীল কোন মনমানসিকতার সাথে জড়িত নয়, আর তা হচ্ছে ইসলাম। আর পূর্ণাঙ্গ এ ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বুনিয়াদীভাবে মানব নির্মিত যে কোন সামাজিক ও নৈতিক ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মানুষের চিন্তা-প্রসূত ও মনগড়া ধারণা, অনুমানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যবস্থায় তাদের বাহ্যিক সুযোগ সুবিধার দিকেই খেয়াল দেওয়া হয় মাত্র!

আর যখন ইসলামের স্থায়ী ভিত্তির ওপর কোন নীতি নৈতিকতা গড়ে ওঠে, তখন সেখানে (সাময়িক ও ) উপস্থিত সুযোগ সুবিধা ও বস্তুগত স্বার্থ গৌণ হয়ে যায় এব ইসলামী অনুভূতি ও আল্লাহর ভয়ের প্রভাবে গোটা পরিবেশের মধ্যে দেখা দেয় অভাবনীয় পরিবর্তন। মানুষ কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করুক, পশু চড়াক, বা শিল্প কারখানার মধ্যে যেখানেই যখন কাজ করুক না কেন, আল্লাহর ভয় এবং তাঁর কাছে জওয়াবদিহি করার চিন্তা না থাকলে তাদের লেনদেন কোন স্থায়ী নীতি নৈতিকার দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পাদিত হওয়া সম্ভব না। 

যখন জীবনের সকল বিষয়কে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করা হবে এবং সকল কাজের পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করবে, তাঁর কাছেই প্রতিদান পাওয়া আকাংখা করবে এবং তাঁর আযাব থেকে বাঁচার প্রেরণা কাজ করবে তখন মানুষে মানুষে গড়ে উঠবে পারস্পরিক সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

আর নীতি নৈতিকতা সম্পর্কিত মানুষের তৈরী বিভিন্ন মতবাদের যতোই প্রশংসা করা হোক না কেন, বাস্তব জীবনে ইসলামী নৈতিকার মোকাবেলায় অর্থনৈতিক আদান প্রদান ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সে সব ব্যর্থ ও নিষ্ফল বলে প্রমানিত হবে।

 তথ্য সহায়তা: তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন ও তাফহীমুল কুরআন এর সূরা হুদ থেকে।

তারিখ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ক্যাটাগরিসমূহ
বই রিভিউ

কালাম দর্শন

কালামদর্শন

সুপরিচিত লেখক, সাহিত্যিক, দার্শনিক মূসা আল হাফিজের “কালামদর্শন” বইটি পড়া শুরু করেছিলাম ২০২১ এর অক্টোবর মাসে এবং তখন শেয়ারও করেছিলাম কিন্তু সমাপ্ত করতে পেরেছি মাত্র গতকাল ০৪ মার্চ ২০২২ ইং তারিখে। একটা লম্বা সময়ের পরিভ্রমন কালামদর্শনে।
বইটি শেষ করতে এতো দীর্ঘ সময় লাগার কারন হচ্ছে এই এমনই একটি জটিল শাস্ত্র যা অনেক জ্ঞানীগুনীর এই বিষয় থেকে এড়িয়ে চলেন সেখানে আমার মতো সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন পাঠকের জন্য কতটা সহজবোধ্য হতে পারে তা ভাববার বিষয়।

বছর খানেক ধরে ফেবুর পাতায় কালাম শাস্ত্র, দর্শন, আসয়ারি, আশয়ারি-মাতুরিদি ইত্যাদি মতবাদ বা দল নিয়ে নানান টাইপের বাহাস চোখে পড়ছিল । আমি নিজেরও দ্বিধা দ্বন্দে ছিলাম যে আমি কাদের দলে পড়ি 😊 , টুকটাক যতটুকু ধর্ম পালনের চেস্টা করি তাও কি বাতিলের পর্যায়ে পড়ছে কি-না। এক্ষেত্রে হাইব্রিড দল যদি বলা হয় তাহলে সেই দলেই সম্ভবত পড়বো, এখান থেকে একটু ওখান থেকে একটু ….. 😊 ।

বুঝের জটিলতার কারনে দর্শন নিয়ে আমার পাঠ অভিজ্ঞতা খুবেই স্বল্প এবং এ সংক্রান্ত প্রথম বই পড়া হয়েছিল মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ) এর ”ইসলামের ইতিহাস দর্শন” নামক বইটি। ছাত্রজীবনে প্রথমবার কী পড়েছিলাম তা কিছুই বুঝি নাই। পরবতীর্ আরো ১৩ বছর পর বইটি হঠাৎই চোখে পড়ায় আবার পড়া শুরু করেছিলাম এবং এখন মনে হচ্ছে বইটি আবারও পড়তে হবে।

এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় যে বইটি পড়া হয়েছিল সেটা হলো মুহাম্মদ আবদুল হালিম এর ”মুসলিম দর্শন : চেতনা ও প্রবাহ” নামক চমৎকার একটি বই। যদিও শুরুর দিকে সহজ মনে হলেও অধের্ কের বেশী পড়া পর আর শেষ করতে পারি নি আমার বুঝ অক্ষমতার কারনে সম্ভবত।

দর্শন সংক্রান্ত তৃতীয় বইটি পড়া হয়েছে জি এইচ হাবীব অনূদিত ইয়স্তেন গার্ডার এর সোফির জগৎ নামক অসাধারণ একটি বই যেখানে শুধুমাত্র ইউরোপীয় দার্শনিকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে গল্পের মাধ্যমে। পাঠ অভিজ্ঞতা অসাধারণ ছিল এবং এর রিভিউ দেয়ার সুযোগও হয়েছিল যদিও এখন মনে হচ্ছে বইটি আবার পড়া দরকার।

এই বইটি সমাপ্ত করার পরও মনে হলো আমি কিছুই বুঝি নাই । সবই মাথার উপর দিয়ে গেছে। তবে কালাম শ্রাস্ত্রের প্রাথমিক জ্ঞান হিসেবে যে এই বইটি পরবর্তীতে আমার উপকার হবে সেটা অনুধাবন করতে পারছি যদি ধারাবাহিক চর্চা ধরে রাখতে পারি। বইটি থেকে কিছু পাঠ শেয়ার করছি পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে।

ইসিলামি দর্শনের মূল উৎস কী?
ইসলামি দর্শনের মূল উতস হলো কুরআন। পবিত্র কুরআন থেকেই মুসলমানরা দার্শনিক চিন্তাচেতনার অনুপ্রেরণা ও খোরাক পেয়েছেন। যদিও অনেক প্রাচ্যবিদ ইসলাম সম্পর্কে অভিযোগ করে, গ্রীকভাষায় অনূদিত গ্রন্থাবলীর উপর ভর করে নাকি মুসলিম দর্শন যাত্রা শুরু হয়, আবার কেউ কেউ বলেন ইসলামি দর্শন আ্যারিস্টটলের অন্ধ অনুকরণ ছাড়া কিছুই নয়, এতে শুধু গ্রীক চিন্তাভাবনাকেই আরবি ভাষায় লেখা হয়েছে।

রাসূল সা. পরবর্তী মুসলিম বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের প্রথম সারির ব্যক্তিদের অন্যতম হলেন রাসূল সা. এর জামাতা হযরত আলী রা. যার প্রকাশ পেয়েছে হযরত আলী রা. এর পত্র, খুতবা ও উপদেশবাণী যা ছিলো দার্শনিকতায় ঋদ্ধ এবং এ মুল্যবান উপদেশগুলোর অনেকাংশই পাওয়া যাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক আলোচনা সমৃদ্ধ বই নাহজুল বালাগাহ’ তে। ‘নাহজুল বালাগাহ’ গ্রন্থে দার্শনিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থায় আলোচিত অনেক বিষয় যেমন, আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ববাদ, আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ও স্বত্তারসাথে বৈশিষ্ট্যর সম্পর্ক, সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক, বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে, না কি অনাদি, অস্তিত্ব জগতের বিভিন্ন স্তর বোধগম্য করে বুঝানোহয়েছে (পৃ:৭৪)
আফসোসের বিষয় হলো এই গ্রন্থটি শিয়াদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিতাব হওয়ার কারনে সুন্নিদের কাছে অস্পৃশ্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
মিথ্যার ভয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে কতটুকু সঠিক জ্ঞান অর্জন সম্ভব তা আল্লাহই ভালো জানেন কিন্তু আমরা যারা সাধারণ, চোখের সামনে জ্ঞান বহরের প্রমানতো দেখছি।

এই ’নাহজুল বালাগাহ’ বইটি গত দুবছর আগে সংগ্রহ করা হলেও ইতিহাসের স্পর্শকাতর বিষয়ে অজ্ঞতার কারনে বইটি পড়া থেকে বিরত ছিলাম এবং অপেক্ষায় ছিলাম যে তাহকিক সহকারে কেউ বইটি জ্ঞাণপিয়াষু ও হেদায়েত পেতে আগ্রহী মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসবে। সে আশাটাই বৃথা! শুধু তাই নয় দুঃখ জনক ব্যাপার হলো রাসূল সা. এর বংশধরদের প্রতি যারা সারাজীবন বিদ্বেষ পোষণ করে গেছেন রাজনৈতিক কারনে তাদের তোষামুদি নিয়ে বড় বড় বই বেরুচ্ছে। হেদায়েত আসবে কোথা থেকে।

দার্শনিক মুসা আল হাফিজের প্রতি আবারও সশ্রদ্ধা প্রকাশ করছি বইটি সম্পর্কে সামান্য কিছু হলেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এবং বইটি পড়ার প্রতি সাহস সৃষ্টি করার কারনে।

ইসলামি দর্শন ও গ্রিক দর্শনের মধ্যে পার্থক্য কী?
গ্রিক দর্শনের শেষ সীমা মানুষের স্বজ্ঞা। সে অভিজ্ঞতা, জ্ঞান -প্রজ্ঞা ও স্বজ্ঞা দিয়ে বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু ইসলামি জ্ঞানের উৎস হচ্ছে ওহী বা আল কুরআন থেকে তার আগমন। অতএব ইসলামী দর্শন যা দেখে, গ্রিক বা আধুনিক পশ্চিমা দর্শন তার অনেক কিছুই দেখে না। দেখার সামর্থ নেই।

গ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো, মানুষ যে ভালো মন্দ বিচার করতে পারে, তা কেবল যুক্তি দিয়েই। মানুষ ছাড়া অন্য কেউ যুক্তপ্রয়োগ করতে পারে না, অতএব ভালো মন্দ বিচার করতে পারে না। ফলে মানুষ সেরা। অন্য প্রাণি অধম।

দার্শনিক আল-ফারাবি বলেছেন, শুধু যুক্তি বুদ্ধি দিয়েই মানুষ সেরা হতে পারে না। বরং মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মূলে আছে বিবেগগুণ। বিবেগ না থাকলে যুক্তি পাশবিক পন্থা অবলম্বন করতেই পারে। যুক্তির ভালো মন্দ যাচাই করবে জাগ্রত, সবল, স্বচ্ছ বিবেগ। (পৃঃ৭৯)

ইলমে কালামের মূল কাজ কী?
ইলমে কালামের একটি কাজ হলো বিভিন্ন দর্শন ও চিন্তাধারার অভিঘাত থেকে ইসলামি বিশ্বাসের সুরক্ষা। এটি ঈমানের জায়গা থেকে কুফুরের সাথে লড়াই করে, ধর্মের জায়গা থেকে ধর্মহীনতার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং বিশ্বাসের জায়গা থেকে অবিশ্বাসের মোকাবেলা করে। (পৃঃ৮২)

ইসলামি ধর্মতত্ত্বের এমন কোন দিক ছিলো না, যার জন্য অন্য সভ্যতার উপাদান লাগবে। ইসলাম আপন জ্ঞানতত্ত্ব, জ্ঞানকাণ্ড ও জ্ঞানকর্মের স্রোত বইয়ে দিয়েছিলো আপন শক্তিতে।

ইসলামি আকিদার প্রতিটি দিককে অকাট্য প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে যুগে যে মাত্রার সন্দেহ সংশয় ও আপত্তি তৈরি হয়, সেই যুগে সেই এলাকার অধিকতর মাত্রার শক্তিশালী জবাব দিয়ে এই আকিদাকে প্রমাণ করতে হবে।

বইটির বিষয়বস্তু অতোটা সহজ হবে না যতটা ভেবেছিলাম যখন বইটি পড়া শুরু করার পর যখন এগুতে থাকি তখনই অনুধাবন করতে থাকি। যের-যবর ছাড়া আরবী বাক্যগুলো যে আমাকে বহুত ভুগিয়েছে। নূর একাডেমীতে আরবী শেখায় বিরতি দেয়ার খেসারত এখন বুঝতে পারছি, আবার যে নিজেরক আরবী শেখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবো বুঝতে পারছি না অথচ এই মূহুর্তে আরবী শিক্ষাটা সবচেয়ে বেশী জরুরী। কারন ইসলামের মূল্যবান গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো অনুধাবন করতে আরবী সাহিত্যে জানার বিকল্প নেই এবং শুধু অনুবাদ পড়ে প্রকৃত অর্থ মর্মউদ্ধার করা অনেক সময় জটিল হয়ে পরে অনেকক্ষেত্রেই অনুবাদকের সাথে মূল লেখকের ভাবনার বৈপরীত্যর কারণে।

লেখক এই বইটিতে প্রথমেই শুরু করেছেন কালাম শাস্ত্র পরিচিতি নিয়ে। তারপর একে একে কালামদর্শন: সমালোচনায় একনজর, কালাম দর্শন বনাম অন্যান্য দর্শন, আধুনিক কালামদর্শন, বিচিত্র ফিরকার উদ্ভব, শিয়াবাদ, খারেজী মতবাদ, মুরজিয়াবাদ, মুতাজিলাবাদ, আসারী-সালাফী ধারার, আশআরী ধারা, মাতুরিদী ধারা, আশআরী-মাতুরিদী ভিন্নমত, এবং এসব দর্শনের আলোচনায় সেইসব অগ্রপথিকদের পরিচিতি নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা নিয়ে এসেছেন সংক্ষিপ্ত আকারে।

বইটি পড়া শেষ করেছি কিন্তু বিস্তারিত রিভিউ করতে পারছিনা, দর্শন ও ধর্ম সংক্রান্ত অজ্ঞতার কারনে। ইসলামি দর্শন নিয়ে আগ্রহী পাঠকদের কাছে বইটির সামান্য পরিচয় তুলে ধরার জন্য আমার এত প্যাচাল।
যারা বইটি সংগ্রহ করতে ইচ্ছুক তারা বই মেলাতে যেয়ে সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

বইয়ের নাম: কালামদর্শন
লেখকের নাম: মুসা আল হাফিজ
প্রকাশনির নাম: শোভা প্রকাশন
মূদ্রন মূল্য: ৫৫০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪১৬

তারিখঃ
বাংলা- ২০ ফাল্গুন ১৪২৮.
আরবি- ০১ শাবান, ১৪৪৩.
ইংরাজি- ০৫ মার্চ, ২০২২ ইং।

ক্যাটাগরিসমূহ
Uncategorized

আমার স্বদেশ ভাবনা

কিছু মানুষ মরে যায়

রেখে যায় তাঁর কর্ম

তা দেখেই বুঝতে পারি

তার জীবন ও ধর্ম

জীবন ঘনিষ্ট দার্শনিক ও চিন্তাবিদ এবনে গোলাম সামাদ। যিনি এই বছরে (২০২১) আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে পরপারে পারি জমিছেন কিন্তু রেখে গেছেন স্বদেশ নিয়ে বিশাল কর্ম এবং ভাবনা।

এই ‘আমার স্বদেশ ভাবনা’ বইটি গত বছর উপহার পেয়েছিলাম পাঠশালা নামক একটি বিশাল ফেসবুক গ্রুপ থেকে যদিও সেখানে আমি এখন অবাঞ্চিত। যাই হউক গতকাল এক কলিগের টেবিলে বইটি দেখে হঠাৎ মনে পরে গেলো যে এই বইটিতো আমারও ছিলো কিন্তু কাজের ব্যস্ততার কারনে তখন বেশী কছিু ভাবতে পারিনি। ঘন্টাখানেক পর সেই কলিগ ভাইটি আমাকে ডেকে ঐ বইটি ফেরত দিয়ে বললো যে আমি নাকি তাকে পড়তে দিয়েছিলাম। বইটি হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা খুলে যখন পেন্সিল দিয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মার্ক করা দেখলাম তখন বিশ্বাস হলো যে এটাতো আমারই বই যা পড়েছিলাম গতবছর। বছর খানেক পর হলেও সকলের সাথে আজ বইটি থেকে কিছু শেয়ার করছি।

লেখক বইটিতে বাংলাদেশ,বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম-কথা এবং রাষ্ট্রর অস্তিত্ব টিকে থাকা নিয়ে তার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন যে, আমাদের সামান্য ভুলের জন্য এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বিলুপ্ত হতে পারে। তিনি জাতীয়তাবাদকে দুভাগে ভাগ করেছেন যেমন আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ এবং আত্মরক্ষামূলক জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এখন হিন্দুত্বকে নির্ভর করে আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। কাজেই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে ভারতের এই আগ্রাসী জাতীয়তাবাদকে মাথায় রাখতে হবে।

বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে তাতে তাঁর কথাগুলোকে অস্বীকার করার কোন উপায় দেখছি না।

বর্তমান পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ১৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নৌপথে তা প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার। কাজেই আমার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য পাকিস্তান তেমন হুমকি স্বরুপ নয় যেমন হুমকিস্বরুপ রয়েছে প্রতিবেশী ভারত। এবং পুরো বইটিতে বাংলাদেশের আত্মরক্ষামূলক জাতীয়তাবাদের দৃষ্টিকোন থেকে তার বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

বঙ্গ ও বাংলাদেশ                   

গবেষকদের মতে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ এই সব নামগুলি নাকি এসেছে চীনা পরিবারভুক্ত ভাষা থেকে। চীনা শব্দ কিয়াং এর অর্থ হলো নদী। চীনা পরিবারভুক্ত ভাষায় য়ং ধ্বনি সাধারণত নদীর নামের সাথে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। যেমন ইয়াংসিকিয়ং, হোয়াংহো, সাংপো, দিস্তাং (দিস্তা) প্রভৃতি। বঙ্গ সম্ভবত ছিলো একটি নদীর নাম বা জলাভূমির নাম। আর তার তীরবর্তী মানুষদের বলা হতো বাঙালি। যদিও কেউ কেউ বাংলাভাষাকে আর্য পরিবারভুক্ত ভাষা হিসেবে বর্ণনা করে। ভারতের খ্যাতনামা মহিলা নৃতাত্তিক ইরাবতী কার্ভ এর মতে বঙ্গ নামটা আর্যভাষা পরিবারের নয়।কারণ যে সব ভাষাকে সাধারণভাবে স্থঅপন করা হয় আর্য পরিবারভুক্ত ভাষায়, ক্রিয়াপদ ছাড়া তাদের ক্ষেত্রে বাক্য গঠিত হতে পারে না। কিন্তু বাংলা ভাষায় ক্রিয়াপদ ছাড়া বাক্য গঠিত হতে পারে। আর্য ও আর্যভাষা সম্পর্কএ সংক্ষেপে জানতে বাংলাভাষী অঞ্চলে প্রাক আর্য সভ্যতা আলোচনাটি পড়া যেতে পারে সেখানে আরো গবেষণামূলক আলোচনা করা হয়েছে।

মুসলমান নৃপতিদের শাসনামলে একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ফারসি ভাষায় বলা হতো ‘বাঙ্গালাহ‘। তা থেকে দেশের নাম হলে পারে বাঙ্গালা। আমরা লিখছি বাংলা। পুর্তগিজ ভাষায় দেশটাকে বলা হতো ( Bengala  )। যা থেকে ইংরেজি ভাষায় নাম হয় ( Bengal )। বৃটিশ শাসনামলে বাংলা প্রদেশের যে অংশ ভাগীরথী নদীর পশ্চিমে পড়তো তাকে বলা হতো পশ্চিমবঙ্গ বা পশ্চিম বাংলা। পদ্মার দক্ষিণে ভাগীরথী  মধুমতি নদীর মধ্যেভাগে বাংলা প্রদেশের যে অংশ পড়ে তাকে বলা হতো মধ্যবঙ্গ বা মধ্যে বাংলা। যমুনা ও মধুমতীর পূর্বে যে অংশ, তাকে বলত পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব বাংলা। পদ্মা নদীর উত্তরে ও যমুনা নদীর পশ্চিমে বাংলা প্রদেশের অংশকে বলা হতো উত্তরবঙ্গ বা উত্তর বাংলা। পাকিস্তান হবার পর বৃটিশ আমলের বাংলা প্রদেশের যে অংশ সাবেক পাকিস্তানে পড়ে ও আসাম থেকে তদানীন্তন শ্রীহট্ট বা সিলেট জেলার যে অংশ গণভোটের মাধ্যমে আসে, তাকে একত্রে বলা হতো পাকিস্তানের পূর্ববঙ্গ প্রদেশ। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে পাকিস্তান এর পূর্ববঙ্গ প্রদেশের নামকরণ করা হয় পূর্ব-পাকিস্তান, তাই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশ নামে।

বাংলা ভাষার পৃষ্টপোষক কারা?

বাংলা ভাষার চর্চা ও পৃষ্টপোষকতা শুরু হয় মূলত স্বাধীন সুলতানদের আমলে যদিও সরকারি ভাষা ছিল ফারসি। স্বাধীন সুলতান হোসেন শাহ এর আমলে তার সেনাপতি পরগল খাঁ সভাকবি পরমেশ্বরকে নির্দেশ দেন সংস্কৃত মহাভারতের বাংলা তরজমা করতে । সুলতান হোসেন শাহ এর পুত্র নসরৎ খান তার সভাকবি শ্রীকর নন্দীকে বাংলায় মহাভারতের একটি অনুবাদ করতে বলেন। শ্রীকর নন্দী মহাভারতের একটি অপেক্ষাকৃত বিস্তৃ অনুবাদ করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় সুলতানী আমলের আগের কোন বাংলা সাহিত্যের পরিচয় এখনও পাওয়া যায় নি। মুসলিম শাসনের আগে বাংলা ভাষায় লেখা কোন বই এখনও আবিস্কৃত হয়নি। সবচেয়ে পুরানো বাংলা বই এখনও যা আবিস্কৃত হয়েছে, তা হলো মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘ইউসুফ জুলেখা’।

স্বাধীনতার ঘোষক কে?

লেখক এখানে স্পর্শকাতর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে এনেছেন। তৎকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ইন্দিরাগান্ধীর বাংলাদেশ সম্পর্কিত আলোচনা তুলে ধরছেন । যারা জানতে ইচ্ছুক তারা বইটি সংগ্রহ করে পড়তে পারেন।

টাকা শব্দটি কোথা থেকে এসেছে?

বাংলা ভাষায় ‘টাকা’ শব্দটা এসেছে তুর্কি শব্দ ‘তনখা’ থেকে। তনখা বলতে বুঝাত এক রকম রোপ্য মুদ্রাকে। সুবে বাংলার বিখ্যাত সুবেদার শায়েস্তা খার আমলে এক তখায় পাওয়া যেত আচ মন  চাল!

ছোট্ট ছোট্ট পরিচ্ছেদে লেখক ও দার্শনিক এবনে গোলাম সামাদ তুলে এনেছেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের ঘটনাগুলো। তুলে এনেছেন ৭৪ এর ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের কথা, কিসের জন্য এ অবস্থা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আমাদের জাতীয় সংগীতের ইতিহাস, তুলে এনেছেন আদিবাসীদের কথা, নারী-স্বাধীনতার আলোচনাতে তুলে এনেছেন বেগম রোকেয়া ও ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণীর কথা।

আমাদের সাহিত্য ও শিল্পকথার নানান কথার পাশাপাশি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন শিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতান (১৯২৩-১৯৯৪) এর সাথে। শিল্পী সুলতানের অধিকাংশ কাজেই হয়েছে হয়েছে বাংলাদেশের কৃষক ও গ্রামের উপর। তাঁর ছবিতে কৃষক-কৃষানীদের চিত্র অংকিত হয়েছে বিশেষ পেশীবহুলভাবে। যারা তাদের পেশীর জোরে খেটে খায় ক্ষেতে খামারে। লেখকের মতে  তাঁর ছবিতে ধরা পড়েছে এক বিশেষ ব্যক্তি-চেতনা। ধরা পড়েছে শক্তিবাদের দর্শন। সুলতান ছিলেন শক্তিবাদের শিল্পী। তিনি এক সময় নাকি যোগ দিয়েছিলেন আল্লামা মাশরেকি প্রতিষ্ঠিত খাকছার দলে যারা বিশ্বাস করতেন শক্তিবাদে।

 এরকম নানান বিষয় নিয়ে মাত্র ১৩৫ পৃষ্ঠার বইটি পাঠ করতে কারো একঘেয়েমি লাগবে বলে মনে হয় না। অনেক পাঠকই আছেন যারা বড় বই পড়তে ক্লান্তি অনুভব করেন কিন্তু নিজের দেশকে নিয়ে ইতিহাস জানতে চান তাদের জন্য এই বইটি উপকারী হবে আশাকরি।

বইয়ের নাম: আমার স্বদেশ ভাবনা

লেখকের নাম: এবনে গোলাম সামাদ

প্রকাশনির নাম: পরিলেখ

মূদ্রণ মূল্য:২৪০.০০

পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৩৫।

ক্যাটাগরিসমূহ
কবিতা

গুম করে দাও সব

এই সাংঘাতিক এদিকে আয়

আমার নামে কী রিপোর্ট করেছিস!

কোটি টাকা মাইরা খাইছি

তোর বা….র  ফুটানি গেছে নি?

িআমারে চিনোছ! এক্কেরে গুম কইরা দিমু

হাতে সুপারি দেখছোস, এক্কেরে শোয়াইয়া দিমু!

তোর আর বা…..র ভাইরা পুপ মাইরা গেছে

তেমন চুপ মাইরা থাক! টু শব্দ করবি না,

চুপ না থাকলে খুন কইরা ফালামু!

হ! ভাইজান! আমি ভীতু মানুষ, আমারে গুম কইরা ফালান

হাতের সুপারি দিয়া এক্কেরে শোয়াইয়া ফেলান।

জোচ্চোরের হাতে মইরাও শান্তনা দিতে পারমু নিজেরে

আল্লারে কমু এ আমারে খুন করছে।

মইরা গেলে আর কী হইবো? বৌ-পোলাপান কানবো

ঐ যে মনে আছে এখনও

যখন আপনাদের বড় ভাইয়েরা খুনের প্রস্তুতি নিছিলো

এমন সময় কন্যাদের ফোন! বাবার কান্না শুনে বলেছিলো

বাবা তুমি কাদঁছো কেন? যতবার ভাবি আমারও কান্না চলে আসে,

আর কান্না করতে চাই না, আমাকেও খুন করে ফেলেন!

আমার পরিবারও আমাকে হারিয়ে এমনি কাদঁবে

আর খোঁজ করে ফিরবে, বাবা কবে ফিরবে ?

কাপুরুষের মতো নিশ্চুপ থাকার চেয়ে

জোড়াল গলায় সত্য পৌঁছাতে চাইে

আজ না হয় কাল এমনিতেই মরবো

মারতে চাও ? নাও বুক পেতে দিলাম মারো!

কি! তোর এত্তো বড় সাহস

নে এখনই তোরে ওপার পাঠিয় দিচ্ছি

হঠাৎ গুলির শব্দ! ছিনেমার মতো পাখিরা উড়ে যায় নি

সবকিছু যেমন ছিলো, তেমনি আছে

শুধু পিচ ঢালা রাস্তা লাল রক্তে ভেসে যাচ্ছে

লাশের তর্জনি শুধু আকাশের দিকে তাক করে

হয়তো বলতে চাচ্ছে, হে আল্লাহ সাক্ষী থাকো।

নোংরা কালপ্রিটদের কোলাহল থেকে মুক্তি একটাই উপায়

সত্য বলে যাও, গুম হয়ে যাও! খুন হয়ে যাও!

যারা গুম হতে চাও সত্যিটা বলে যাও

যারা গুলি খেতে চাও, বুক মেল ধরো

চলো গুম হওয়ার সারিতে দাড়াই

প্রজন্মকে বলে যাই, সত্যের পথে ছিলাম মোরা

সত্যেরই বিজয় চাই।

তারিখ: ১৩ জুন ২০২১

ক্যাটাগরিসমূহ
ছড়া

রম্য ছড়া: বোতল টানা ছেলে

বোতল টানা সেই ছেলেটা,

দেশে ফিরেছে

খেলার মাঠে লাথি দিয়ে

স্ট্যাম্প ভেঙেছে!

বুবুর মডেল সেনা

প্রমান রেখেছে

একের পর এক

ইতিহাস গড়েছে।

সব খানেতেই মডেল

মসজিদ বা সেনা

অপেক্ষায় থাক সবাই

বাড়ছে শুধু দেনা।

তারিখ: ১২ ০৬ ২০২১